1যীশু সেই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে ও যর্দ্দন নদীর অন্য পারে এলেন ; এবং তাঁর কাছে আবার লোক আসতে লাগলো এবং তিনি নিজের নিয়ম অনুসারে আবার তাদেরকে শিক্ষা দিতে লাগলেন ।
2তখন ফরীশীরা পরীক্ষা করার জন্য তাঁর কাছে এসে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলো একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারে?
3তিনি তাদের উত্তর দিলেন , মোশি তোমাদেরকে কি আদেশ দিয়েছেন ?
4তারা বললো, ছাড়পত্র লিখে নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার অনুমতি মোশি দিয়েছেন ।
5যীশু তাদেরকে বললেন , তোমাদের মন কঠিন বলেই মোশি এই আদেশ লিখেছেন;
6কিন্তু সৃষ্টির প্রথম থেকে ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদের বানিয়েছেন;
7“এই জন্য মানুষ নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে নিজের স্ত্রীর প্রতি আকর্ষিত হবে l
8আর তারা দুই জন এক দেহ হবে,” সুতরাং তারা আর দুই নয়, কিন্তু এক দেহ ।
9অতএব ঈশ্বর যাদেরকে এক করেছেন মানুষ যেন তাদের আলাদা না করে।
10শিষ্যেরা ঘরে এসে আবার সেই বিষয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন ।
11তিনি তাদেরকে বললেন , যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য স্ত্রীকে বিয়ে করে, সে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে;
12আর স্ত্রী যদি নিজের স্বামীকে ছেড়ে অন্য আর এক জন পুরুষকে বিয়ে করে, তবে সেও ব্যভিচার করে।
13পরে লোকেরা কতগুলো শিশুকে যীশুর কাছে আনলো, যেন তিনি তাদেরকে ছুতে পারেন কিন্তু শিষ্যরা ওদেরকে বকলেন।
14কিন্তু যীশু তা দেখে দুঃখ পেলেন, আর শিষ্যদের কে বললেন , শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও , বারণ কোর না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই রকম শিশুদেরই ।
15আমি তোমাদের সত্যি বলছি , যদি কেউ শিশুর মতো সরল বিশ্বাস নিয়ে ঈশ্বরের কাছে না আসে তবে সে কখনই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।
16পরে যীশু শিশুদের কোলে তুলে নিলেন ও তাদের মাথার উপরে হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন l
17পরে যখন তিনি আবার বের হয়ে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, একজন লোক দৌড়ে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বিনীত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন হে সৎগুরু, স্বর্গে যেতে হোলে আমাকে কী কী করতে হবে?
18যীশু তাকে বললেন, আমাকে সৎ কেন বলছো ? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়।
19তুমি আদেশগুলি জান, “মানুষ খুন করো না , ব্যভিচার করো না, চুরি করো না, মিথ্যা বোলে প্রতারণা কোর না, ঠকিও না, তোমার বাবা মাকে সন্মান করো”।
20সেই লোকটি তাঁকে বললো, হে গুরুদ, ছোট্ট বয়স থেকে এই সব নিয়ম আমি মেনে আসছি ।
21যীশু তার দিকে ভালোবেসে তাকালেন এবং বললেন, একটি বিষয়ে তোমার অভাব আছে, যাও, তোমার যা কিছু আছে, বিক্রি করে গরীবদের দান কর, তাতে স্বর্গে তুমি ধন পাবে; আর এস, আমাকে অনুসরণ করো ।
22এই কথায় লোকটি দুঃখ পেয়ে চলে গেলো, কারণ তার অনেক ধন ছিল।
23তারপর যীশু চারিদিকে তাকিয়ে নিজের শিষ্যদের বললেন, যারা ধনী তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা অনেক কঠিন !
24তাঁর কথা শুনে শিষ্যরা অবাক হয়ে গেলো; কিন্তু যীশু আবার তাদের বললেন, সন্তানেরা যারা ধন সম্পত্তিতে নির্ভর করে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা ভীষণ কঠিন !
25ঈশ্বরের রাজ্যে ধনী মানুষের ঢোকার থেকে সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সোজা ।
26তখন তারা খুব অবাক হয়ে বললেন , তবে কার মুক্তি হতে পারে?
27যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন এটা মানুষের কাছে অসম্ভব, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব নয়, কারণ ঈশ্বরের কাছে সবই সম্ভব।
28তখন পিতর তাঁকে বলতে লাগলেন, দেখুন, আমরা সবকিছু ছেড়ে আপনার অনুসরণকারী হয়েছি l
29যীশু বললেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এমন কেউ নেই, যে আমার জন্য ও আমার শুভবার্তা প্রচারের জন্য তার ঘরবাড়ি, ভাইবোনদের, মা-বাবাকে, ছেলে-মেয়েকে, জমিজায়গা ছেড়েছে কিন্তু এই পৃথিবীতে থাকাকালীন সে তার শতগুণ কি ফিরে পাবে না;
30সে তার ঘরবাড়ি, ভাই, বোন, মা, ছেলেমেয়ে ও জমিজমা, সবই ফিরে পাবে এবং আগামী দিনে অমর জীবন পাবে।
31কিন্তু যারা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষের দিকে যাবে, ও যারা শেষের, তারা প্রথম হবে । যীশু তৃতীয় বার নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন ।
32একসময়ে তারা, যিরূশালেমের পথে যাচ্ছিলেন এবং যীশু তাদের আগে আগে যাচ্ছিলেন, তখন শিষ্যরা অবাক হয়ে গেল; আর যারা পিছনে আসছিল, তারা ভয় পেলো। পরে তিনি আবার সেই বারো জনকে নিয়ে নিজের ওপর যা যা ঘটনা ঘটবে, তা তাদের বোলতে লাগলেন।
33তিনি বললেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাচ্ছি, আর মনুষ্য সন্তানকে প্রধান যাজক ও ব্যবস্থা শিক্ষকদের হাতে ধরিয়ে দেবে এবং এরা বিচারে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে, এবং অন্যজাতীর হাতে তাঁকে তুলে দেবে ।
34আর তারা তাঁকে ঠাট্টা করবে, তাঁর মুখে থুথু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে ও মেরে ফেলবে; আর তিন দিন পরে তিনি আবার বেঁচে উঠবেন l
35পরে সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহন, তাঁর কাছে এসে বললেন, হে গুরু আমাদের ইচ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যা চাইবো, আপনি তা আমাদের জন্য করবেন ।
36তিনি তাদের বললেন , তোমাদের ইচ্ছা কি? তোমাদের জন্য আমি কি করবো ?
37তারা বললো , আমাদেরকে এই আশীর্বাদ করুন, আপনি যখন রাজা হবেন তখন আমরা এক জন আপনার ডান পাশে , আর এক জন আপনার বাম পাশে বসতে পারি ।
38যীশু তাদের বললেন , তোমরা কি চাইছ তোমরা তা জানো না । আমি যে পাত্রে পান করি, তাতে কি তোমরা পান করতে পার, এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাতে কি তোমরা বাপ্তাইজিত হতে পার?
39তারা বললো পারি। যীশু তাদেরকে বললেন , আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে তোমরা পান করবে এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাতে তোমরাও বাপ্তাইজিত হবে;
40কিন্তু যাদের জন্য জায়গা তৈরী করা হয়েছে, তাদের ছাড়া আর কাউকেও আমার ডান পাশে কি বাম পাশে বসতে দেওয়ার আমার অধিকার নেই ।
41এই কথা শুনে অন্য দশ জন যাকোব ও যোহনের উপর রেগে যেতে লাগলো ।
42কিন্তু যীশু তাদেরকে কাছে ডেকে বললেন, তোমরা জান, জাতিদিগের ভিতরে যারা শাসনকর্ত্তা বলে পরিচিত , তারা তাদের মনিব হয় এবং তাদের ভেতরে যারা মহান, তারা তাদের ওপর ক্ষমতাগিরি করে।
43তোমাদের ভেতরে সেরকম নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্য যে কেউ মহান্ হতে চায়, সে তোমাদের সেবক হবে।
44এবং তোমাদের মধ্য যে কেউ শ্রেষ্ঠ হতে চায়, সে সকলের চাকর হবে।
45কারণ মনুষ্য সন্তান জগতে সেবা পেতে আসিনি, কিন্তু অপরের সেবা করতে এসেছে এবং মানুষের জন্য নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসাবে দিতে এসেছেন।
46পরে তাঁরা যিরীহোতে এলেন । আর তিনি যখন নিজের শিষ্যদের ও অনেক লোকের সঙ্গে যিরীহো থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন , তখন তীময়ের ছেলে বরতীময় নামে এক জন অন্ধ ভিখারী পথের পাশে বসেছিলো ।
47সে যখন নাসরতীয় যীশুর কথা শুনতে পেলো , তখন চেঁচিয়ে বলতে লাগলো হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমার ওপর দয়া করুন।
48তখন অনেক লোক চুপ করো চুপ করো বলে তাকে বকা দিল; কিন্তু সে আরও জোরে চেঁচাতে লাগলো , হে দায়ূদ-সন্তান, আমার ওপর দয়া করুন।
49তখন যীশু থেমে বললেন, ওকে ডাক; তাতে লোকেরা সেই অন্ধকে ডেকে বললো, সাহস কর, ওঠ, যীশু তোমাকে ডাকছেন।
50তখন সে নিজের কাপড় ফেলে লাফ দিয়ে উঠে যীশুর কাছে গেল।
51যীশু তাকে বললেন , তুমি কি চাও? আমি তোমার জন্য কি করবো ? অন্ধ তাঁকে বললো, হে গুরুদেব, আমি যেন দেখতে পাই।
52যীশু তাকে বললেন, চলে যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে চোখে দেখতে সাহায্য করল। তখনই সে দেখতে পেলো এবং পথ দিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলো ।