1তখন যিরুশালেম থেকে ফরীশীরা ও আইনের শিক্ষকেরা যীশুর কাছে এসে বললেন,
2আপনার শিষ্যরা কি জন্য প্রাচীন পূর্বপুরুষদের নিয়ম কানুন পালন করে না ? কারণ খাওয়ার সময়ে তারা হাত ধোয় না।
3তিনি এর উত্তরে তাদের বললেন, "তোমরাও তোমাদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের আদেশ পালন কর না কেন ?"
4কারণ ঈশ্বর বলেছেন, "তুমি তোমার বাবাকে ও মাকে সম্মান করবে, আর যে কেউ বাবার কি মায়ের নিন্দা করে, তার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যই হবে।"
5কিন্তু তোমরা বলে থাক, যে ব্যক্তি বাবাকে কি মাকে বলে, 'আমি যা কিছু দিয়ে তোমার উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উত্সর্গ করা হয়েছে,' সেই ব্যক্তির বাবাকে বা তার মাকে আর সম্মান করার দরকার নেই,
6এইভাবে তোমরা নিজেদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের আদেশকে অগ্রাহ্য করছ।
7ভণ্ডেরা, যিশাইয় ভাববাদী তোমাদের বিষয়ে একদম ঠিক ভাববাণী বলেছেন,
8"এই লোকেরা খালি মুখেই আমার সম্মান করে, কিন্তু এদের হৃদয় আমার থেকে দূরে থাকে.
9আর এরা বৃথাই আমার আরাধনা করে এবং মানুষের বানানো আদেশকে প্রকৃত আদেশ বলে শিক্ষা দেয়।"
10পরে তিনি লোকদেরকে কাছে ডেকে বললেন, "তোমরা শোনো ও বোঝ।
11মুখের ভেতরে যা কিছু যায়, তা যে মানুষকে অপবিত্র করে, এমন নয়, কিন্তু মুখ থেকে যা বের হয়, সেসব মানুষকে অপবিত্র করে।"
12তখন শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, "আপনি কি জানেন, এই কথা শুনে ফরীশীরা আঘাত পেয়েছে ?"
13তিনি এর উত্তরে বললেন, "আমার স্বর্গীয় পিতা যে সমস্ত চারা রোপণ করেন নি, সে সমস্তই উপড়িয়ে ফেলা হবে।"
14ওদের কথা বাদ দাও, ওরা নিজেরা অন্ধ হয়ে অন্য অন্ধদেরকে পথ দেখায়, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখায় তবে দুজনেই গর্ত্তে পড়বে।
15পিতর তাঁকে বললেন, "এই কথার অর্থ আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।"
16তিনি বললেন, "তোমরাও কি এখনও বুঝতে পার না ?
17এটা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের ভিতরে যায়, তা পেটের মধ্যে যায়, পরে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ?
18কিন্তু যা যা মুখ থেকে বের হয়, তা হৃদয় থেকে আসে, আর সেগুলোই মানুষকে অপবিত্র করে।"
19কেননা হৃদয় থেকে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চুরি, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা বের হয়ে আসে।
20এই সমস্তই মানুষকে অপবিত্র করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খাবার খেলে মানুষ তাতে অপবিত্র হয় না।
21পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন।
22আর দেখ, ঐ অঞ্চলের একটি কনানীয় মহিলা এসে চিত্কার করে বলতে লাগল, হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাকে দয়া করুন, আমার মেয়েটি ভূতগ্রস্থ হয়ে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে।
23কিন্তু তিনি তাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করলেন, একে বিদায় করুন, কেননা এ আমাদের পিছন পিছন চিত্কার করছে।
24তিনি এর উত্তরে বললেন, "ইস্রায়েলের হারান মেষ ছাড়া আর কারও কাছে আমাকে পাঠানো হয় নি।"
25কিন্তু মহিলাটি এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, "প্রভু, আমার উপকার করুন।"
26তিনি বললেন, "সন্তানদের খাবার নিয়ে কুকুরদের কাছে ফেলে দাও য়া ভাল না।"
27তাতে সে বলল, "হ্যাঁ, প্রভু, কারণ কুকুরেরাও তাদের মালিকের টেবিল থেকে সেই সব খাবারের টুকরো পড়ে, তারা খায়।"
28তখন যীশু এর উত্তরে তাকে বললেন, "হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস, তোমার যেমন ইচ্ছা, তেমনি তোমার প্রতি হোক।" আর সেই মুহুর্তেই তার মেয়ে সুস্থ হল।
29পরে যীশু সেখান থেকে গালীল সমুদ্রের ধারে উপস্থিত হলেন এবং পাহাড়ে উঠে সেই জায়গায় বসলেন।
30আর অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল, তারা তাদের সঙ্গে খোঁড়া, অন্ধ, বোবা, নুলা এবং আরও অনেক লোককে নিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ফেলে রাখল, আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন।
31আর এইভাবে বোবারা কথা বলছিল, নুলারা সুস্থ হচ্ছিল, খোঁড়ারা হাঁটতে পারছিল এবং অন্ধেরা দেখতে পাচ্ছিল, তখন তারা এইসব দেখে খুবই আশ্চর্য্য হল এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের গৌরব করল।
32তখন যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে কাছে ডেকে বললেন, "এই লোকদের জন্য আমার করুনা হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন আমার সঙ্গে আছে এবং এদের কাছে খাবার কিছুই নেই, আর আমি এদেরকে না খাইয়ে বিদায় করতে চাই না, কারণ এরা রাস্তায় দুর্বল হয়ে পড়বে ।"
33শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, "এই ফাঁকা জায়গায় আমরা কোথায় এত রুটি পাব এবং এত লোককে কি ভাবে তৃপ্ত করব ?"
34যীশু তাঁদের বললেন, "তোমাদের কাছে কতগুলি রুটি আছে ?" তাঁরা বললেন, "সাতখানা, আর কয়েকটি ছোট মাছ আছে।"
35তখন তিনি লোকদেরকে মাটিতে বসতে আদেশ দিলেন।
36পরে তিনি সেই সাতখানা রুটি ও সেই কয়েকটি মাছ নিলেন, ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙ্গলেন এবং শিষ্যদেরকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদেরকে দিলেন।
37তখন সবাই খাবার খেয়ে তৃপ্ত হল এবং যে সমস্ত খাবারের টুকরো অবশিষ্ট ছিল তা তাঁরা একজায়গায় জমা করলেন এবং সাতটা ঝুঁড়ি ভর্তি করে তুলে নিলেন ।
38যারা খাবার খেয়েছিল, তাদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বাদে, শুধু পুরুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার।
39পরে তিনি লোকদেরকে বিদায় করে, নৌকা করে মগদনের সীমাতে উপস্থিত হলেন।