1সেই দিন যীশু ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসলেন।
2আর প্রচুর লোক তাঁর কাছে এলো, তাতে তিনি একখানি নৌকায় উঠে বসলেন এবং সব লোক তীরে দাঁড়িয়ে রইল।
3তখন তিনি গল্পের মাধ্যমে তাদের অনেক কথা বলতে লাগলেন।
4তিনি বললেন, দেখ, একজন চাষী বীজ বপন করতে গেল। বপনের সময় কিছু বীজ পথের পাশে পড়ল, তাতে পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল।
5আর কিছু বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, যেখানে বেশী মাটি ছিল না, তাতে বেশী মাটি না পাওয়াতে তা শীঘ্র অঙ্কুরিত হয়ে উঠল, কিন্তু সূর্য উঠলে পর পুড়ে গেল,
6এবং তার শিকড় না থাকায় শুকিয়ে গেল।
7আর কিছু বীজ কাঁটাবনে পড়ল, তাতে কাঁটাগাছ বেড়ে তা চেপে রাখল।
8আর কিছু বীজ ভালো জমিতে পড়ল ও ফল দিতে লাগল; কিছু একশোগুন, কিছু ষাট গুন, কিছু ত্রিশ গুন।
9যার কান আছে সে শুনুক।
10পরে শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জন্য গল্পের মাধ্যমে ওদের কাছে কথা বলছেন?
11তিনি উত্তর করে বললেন, স্বর্গ-রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সব তোমাদের জানতে দাও য়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দাও য়া হয়নি।
12কারণ যার আছে, তাকে দেওয়া যাবে, ও তার বেশী হবে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে, তাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
13এই জন্য আমি তোমাদের গল্পের মাধ্যমে কথা বলছি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শু নাও শোনে না এবং বুঝেও বোঝে না।
14আর তাদের বিষয়ে যিশাইয়ের এই ভাববাণী পূর্ণ হচ্ছে, “তোমরা কানে শুনবে, কিন্তু কোনোভাবে বুঝবে না; আর চোখে দেখবে, কিন্তু কোনোভাবে জানবে না,
15কারণ এই লোকদের হৃদয় অসাড় হয়ে পড়েছে, তারা কানেও শোনে না ও তারা চোখ বন্ধ করেছে, পাছে তারা চোখে দেখে, আর কানে শোনে, হৃদয়ে বোঝে এবং ফিরে আসে, আর আমি তাদের সুস্থ করি।”
16কিন্তু ধন্য তোমাদের চোখ, কারণ তা দেখেএবং তোমাদের কান, কারণ তা শোনে;
17কারণ আমি তোমাদের সত্য বলছি, তোমরা যা যা দেখছ, তা অনেক ভাববাদী ও ধার্মিক লোক দেখতে ইচ্ছা করলেও দেখতে পায়নি এবং তোমরা যা যা শুনছ, তা তাঁরা শুনতে ইচ্ছা করলেও শুনতে পায়নি।
18অতএব তোমরা বীজ বোনার গল্প শোন।
19যখন কেউ সেই রাজ্যের বাক্য শুনে না বোঝে, তখন সেই খারাপ আত্মা এসে, তার অন্তরে যা বোনা হয়েছিল, তা নিয়ে চলে যায়; এ সেই, যে পথের পাশে পড়ে থাকা বীজের কথা।
20আর যে পাথুরে জমির বীজ, এ সেই, যে সেই বাক্য শুনে অমনি আনন্দ সহকারে গ্রহণ করে, কিন্তু তার অন্তরে শিকড় নেই, সে অল্প সময় মাত্র স্থির থাকে;
21পরে সেই বাক্যের জন্য কষ্ট কিংবা তাড়না ঘটলে সে অমনি বাধা পায়।
22আর যে কাঁটাবনের মধ্যে বীজ, এ সেই, যে সেই বাক্য শোনে, আর সংসারের চিন্তা ও টাকা-পয়সার আসক্তি সেই বাক্য চেপে রাখে, তাতে সে ফলহীন হয়।
23আর যে ভালো জমির বীজ, এ সেই, যে সেই বাক্য শোনে তা বোঝে, সে বাস্তবিক ফলবান্ হয়এবং কিছু একশো গুন, কিছু ষাট গুন, ও কিছু ত্রিশ গুন ফল দেয়।
24পরে তিনি তাদের কাছে আর এক গল্প উপস্থিত করে বললেন, স্বর্গ-রাজ্যকে এমন এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করা যায়, যিনি নিজের ক্ষেতে ভাল বীজ বপন করলেন।
25কিন্তু লোকে ঘুমিয়ে পড়লে পর তাঁর শত্রুরা এসে ঐ গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বপন করে চলে গেল।
26পরে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ফল দিল, তখন শ্যামাঘাসও বেড়ে উঠল।
27তাতে সেই মালিকের দাসেরা এসে তাঁকে বলল, মহাশয়, আপনি কি নিজের ক্ষেতে ভাল বীজ বপন করেননি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে হল?
28তিনি তাদের বললেন, কোন শত্রু এটা করেছে। দাসেরা তাঁকে বলল, তবে আপনি কি এমন ইচ্ছা করেন যে, আমরা গিয়ে তা সংগ্রহ করি?
29তিনি বললেন, না, কি জানি, শ্যামাঘাস সংগ্রহ করবার সময়ে তোমরা তার সাথে গমও উপড়িয়ে ফেলবে।
30ফসল কাটার সময় পর্য্যন্ত দুটোকেই একসঙ্গে বাড়তে দাও। পরে কাটার সময়ে আমি মজুরদেরকে বলব, তোমরা প্রথমে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে পোড়াবার জন্য বোঝা বেঁধে রাখ, কিন্তু গম আমার গোলায় সংগ্রহ কর।
31তিনি আর এক গল্প তাদের কাছে উপস্থিত করে বললেন, স্বর্গ-রাজ্য এমন একটি সরিষা-দানার সমান, যা কোন ব্যক্তি নিয়ে নিজের ক্ষেতে বপন করল।
32সব বীজের মধ্যে ঐ বীজ অতি ক্ষুদ্র; কিন্তু বেড়ে উঠলে, পর তা শাকের থেকে বড় হয়এবং এমন গাছ হয়ে ওঠে যে, আকাশের পাখিরা এসে তার ডালে বাস করে।
33তিনি তাদের আর এক গল্প বললেন, স্বর্গ-রাজ্য এমন খামির সমান, যা কোন স্ত্রীলোক নিয়ে তিন মণ ময়দার মধ্যে ঢেকে রাখল, শেষে সবই খামিময় হয়ে উঠল।
34এই সব কথা যীশু গল্পের মাধ্যমে লোকদেরকে বললেন, গল্প ছাড়া তাদের কিছুই বললেন না;
35যেন ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হয়, “আমি গল্প কথায় নিজের মুখ খুলব, জগতের শুরু থেকে যা যা গোপন আছে, সে সব প্রকাশ করব।।”
36তখন তিনি সবাইকে বিদায় করে বাড়ি এলেন। আর তাঁর শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, ক্ষেতের শ্যামাঘাসের গল্পটি আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলুন।
37তিনি উত্তর করে বললেন, যিনি ভাল বীজ বপন করেন, তিনি মানবপুত্র।
38ক্ষেত হল জগৎ; ভাল বীজ হল ঈশ্বরের রাজ্যের সন্তানরা; শ্যামাঘাস হল সেই মন্দ-আত্মার সন্তানরা;
39যে শত্রু তা বুনেছিল, সে দিয়াবল; কাটার সময় যুগের শেষ; মজুরেরা হল স্বর্গদূত।
40অতএব যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়া দাও য়া হয় , তেমনি যুগের শেষে হবে।
41মানবপুত্র নিজের দূতদেরকে পাঠাবেন; তাঁরা তাঁর রাজ্য থেকে সব বাঁধাজনক বিষয় ও অধর্ম্মাচারীদেরকে সংগ্রহ করবেন,
42এবং তাদের আগুনে ফেলে দেবেন; সেই জায়গায় কান্নাকাটি ও দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হবে।
43তখন ধার্মিকেরা নিজেদের পিতার রাজ্যে সুর্য্যের মত উজ্জ্বল হবে। যার কাণ আছে , সে শুনুক।
44স্বর্গ-রাজ্য ক্ষেতের মধ্যে গোপন এমন সম্পত্তির সমান, যা দেখতে পেয়ে এক ব্যক্তি লুকিয়ে রাখল, পরে আনন্দের আবেগে গিয়ে সব বিক্রি করে সেই জমি কিনল।
45আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক বণিকের সমান, যে ভালো ভালো মুক্তার খোঁজ করছিল,
46সে একটি মহামূল্য মুক্তা দেখতে পেয়ে সব বিক্রি করে তা কিনল।
47আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক টানা জালের সমান, যা সমুদ্রে ফেলে দাও য়া হলে সব রকম মাছ সংগ্রহ করল।
48জালটা পরিপূর্ণ হলে লোকে পাড়ে টেনে তুলল, আর বসে বসে ভালগুলো সংগ্রহ করে পাত্রে রাখলএবং খারাপগুলো ফেলে দিল।
49এইভাবে যুগের শেষে হবে; দূতেরা এসে ধার্মিক দের মধ্য থেকে খারাপদের আলাদা করবেন,
50এবং তাদের আগুনে ফেলে দেবেন; সেই জায়গায় কান্নাকাটি ও দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হবে।
51তোমরা কি এই সব বুঝতে পেরেছ? তাঁরা বললেন হ্যাঁ ।
52তখন তিনি তাঁদের বললেন, এই জন্য স্বর্গ-রাজ্যের বিষয়ে শিক্ষিত প্রত্যেক ধর্ম-শিক্ষক এমন ঘরের মালিকের সমান, যে নিজের ভান্ডার থেকে নতুন ও পুরানো জিনিস বের করে।
53এই সকল গল্প শেষ করবার পর যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন।
54আর তিনি নিজের দেশে এসে লোকদের সমাজ-ঘরে তাদের উপদেশ দিতে লাগলেন, তাতে তারা চমৎকৃত হয়ে বলল, এর এমন জ্ঞান ও এমন অলৌকিক কাজ সব কোথা থেকে হল?
55এ কি ছুতোরের ছেলে না? এর মায়ের নাম কি মরিয়ম না? এবং যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা কি এর ভাই না?
56আর এর বোনেরা কি সবাই আমাদের এখানে নেই? তবে এ কোথার থেকে এই সব পেল? এইভাবে তারা তাকে বাধা দিতে লাগল।
57কিন্তু যীশু তাদের বললেন, নিজের দেশ ও জাতি ছাড়া আর কোথাও ভাববাদী অসম্মানিত হন না।
58আর তাদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে প্রচুর অলৌকিক কাজ করলেন না।